কত রকম বাড়িঘর

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বিজ্ঞান অনুশীলন বই - NCTB BOOK

কত রকম বাড়িঘর

আমাদের থাকার জায়গা বলতে যে বাড়ি, তার নকশায় কত যে বৈচিত্র্য কখনও খেয়াল করে দেখেছ? এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশেই বাড়িঘরের কত না বিভিন্নতা! আর সারা পৃথিবীর বাড়িঘরের ধরনের আলাপ করতে গেলে তো কথাই নেই। কখনও ভেবে দেখেছ, এই বৈচিত্র্যের কারণ কী? কীসের ওপর নির্ভর করে? এই শতরকমের ঘরবাড়ির নকশা নিয়েই আমাদের এবারের কাজ!

 

প্রথম সেশন
  • আমরা যে বাসাবাড়িতে থাকি তার কতরকম ধরন হয় বল তো? তোমাদের শহর বা গ্রামের সব বাড়ী কি একইরকম? আবার বাংলাদেশের সব এলাকার বাড়িঘর কি একইরকম?
  • এই শিখন অভিজ্ঞতার শুরুতেই চলো খুঁজে দেখা যাক কতরকম বাড়ির নকশা আমরা আসলে দেখি।
  • ৫/৬ জনের ছোট দলে ভাগ হয়ে যাও। সবাই মিলে আলোচনা করে দেখো কত ধরনের বাড়ি তোমরা দেখেছ। দলের সবাই নিজের আলোচনা করে একেক জন একেক রকম নকশা এঁকে দেখাতে পারো।
  • এবার ক্লাসের বাকিদেরকে তোমার দলের আঁকা বাড়িঘরের নকশা দেখাও, অন্য দলের কাজ দেখে নিজের মতামত দাও।
  • নিচের ছবিগুলো দেখো। কোন বাড়ির নকশা কোন এলাকার বলতে পারবে? দলে আলোচনা করো।
  • আচ্ছা কখনও ভেবে দেখেছ, এই বিভিন্ন ধরনের দেশে বিভিন্ন পরিবেশে বাড়ির নকশায় এত বৈচিত্র্যের কারণ কি? কোন কোন বিষয়ের উপর এই বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ভর করে? চিন্তা করে তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
  • তোমাদের দলের লেখা বৈশিষ্টয়গুলো ক্লাসের বাকিদের দেখাও। অন্যদের উল্লেখ করা বৈশিষ্টয়গুলো শোনো। এই সকল বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে কোনগুলো নির্দিষ্ট পরিবেশ ও ভূমিরূপ সংক্রান্ত? আবার উপকরণের প্রাপ্যতার কথা কোন কোন বৈশিষ্ট্যের আলোচনায় উঠে এসেছে লক্ষ করো।
  • একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, বাসা বাড়ির নকশা যেমন ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক কার্যকারণের সাথে সম্পর্কিত, একইভাবে মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোর সাথেও সম্পর্কিত। অর্থাৎ, মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের কারণেও বাসস্থানের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে।
 দ্বিতীয় সেশন
  • আগের সেশনে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছিল মনে আছে নিশ্চয়ই? বাসাবাড়ির নকশার বৈচিত্র্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে তোমরা নানাদিক নিয়ে আলোচনা করেছিলে; পরিবেশগত দিক তার মধ্যে একটি।
  • এখন ভেবে দেখো, কোন এলাকার পরিবেশ কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে? পরিবেশের মূল উপাদান কোনগুলো? নিজেরা চিন্তা করে দেখো।
  • ভূমিরূপ এবং পরিবেশ কেমন হবে তা অনেকখানি সেই এলাকার পানির প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে। অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে ভূমিরূপ অধ্যায় বের করো। দলে বসে পানি বিষয়ক অংশটুকু পড় এবং নিজেরা আলোচনা করো।
  • পড়া হয়ে গেলে শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সাথেও আলোচনা করো। নিজেরা আলোচনার ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নের উত্তর লেখ।
  • শহর অঞ্চলে জলাবদ্ধতা বেশি হয় কেন?
তৃতীয় সেশন
  • আগের সেশনের সূত্র ধরে শুরু করা যাক। আলোচনা হচ্ছিল পরিবেশ ও ভূমিরূপ নিয়ে। বলতে পারো, পৃথিবীতে ভূমিরূপের এত বৈচিত্রের কারণ কী? আবার একই জায়গার ভূমিরূপ সবসময় একইরকম থাকে তাও তো নয়। কী কী কারণে ভূমিরূপ পরিবর্তিত হয়?
  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে আগের মতই দলে বসে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কেজেনে নাও। ভূ-অভ্যন্তরস্থ এবং ভূ-বহিঃস্থ কী কী কারণে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, এবং পরিবর্তিত হয় তা পড়ে নিজেরা আলোচনা করো।
  • পড়া হয়ে গেলে শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সাথে আলোচনা করো। ভূমিরূপ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলো বুঝতে অসুবিধা হলে শিক্ষকের সহায়তা নাও।
চতুর্থ ও পঞ্চম সেশন
  • বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া তো জানা গেল, কিন্তু তোমরা কি জানো বাংলাদেশের ভূমিরূপ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? বাংলাদেশ ও তার চারপাশের এলাকার মানচিত্র দেখে অনুমান করার চেষ্টা করো।
  • উপরের ছবিতে গুগল আর্থ থেকে বাংলাদেশ ও তার চারপাশের এলাকার মানচিত্র ভালভাবে লক্ষ করো। বাংলাদেশের উপর দিয়ে কতো নদী বয়ে গেছে খেয়াল করো। অবক্ষেপণের মাধ্যমে কীভাবে বাংলাদেশের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়েছে তা অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পড়ে নাও ও নিজেরা আলোচনা করো।
  • এবার ভেবে দেখ, ভূমিরূপ তৈরীর এই প্রক্রিয়ার সাথে বাংলাদেশের স্থানীয় প্রযুক্তিতে, অর্থাৎ মাটি এবং ছনের তৈরি বাড়ি, টিনের ঘর- এই ধরনের বাড়ির ডিজাইন গড়ে ওঠার কোন সম্পর্ক আছে কিনা। দলে আলোচনা করো এবং নিচে তোমাদের উত্তর লিখে রাখো।
  • মানুষের বাড়িঘর নিয়ে তো অনেক কথা হল। এবার ভেবে দেখো, সব প্রাণি কি একই রকম বাসস্থান বেছে নেয়? সব এলাকার প্রাণীদের বাসস্থান কি একই রকম? সব এলাকায়, সব মাটিতে কি একই গাছ জন্মে? দলে আলোচনা করো।
  • বুঝতেই পারছ, মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জীবের বাসস্থানও অনেক দিক দিয়ে তার পরিবেশ এবং ভূমিরূপের সাথে সম্পর্কিত।
  • একটু আগেই স্থানীয় প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। প্রতিটি এলাকায় সেই এলাকার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঘরবাড়ি নির্মানের বিশেষ প্রযুক্তি গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের স্থানীয় প্রযুক্তি কী কী ভেবে দেখো। মাটি বা ছনের ঘর এই দেশের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। তোমাদের কারো মাটির ঘরে থাকার অভিজ্ঞতা আছে? থাকলে নিশচয়ই জানো, মাটির ঘর তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছ, কেন? আবার শহরাঞ্চলে কাচঘেরা ঘর তুলনামূলক গরম কেন?
  • ঘরবাড়ি নির্মানে তাপমাত্রা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। কাজেই বাসাবাড়ির নকশা আরও ভালভাবে বুঝতে তাপ ও তাপমাত্রা সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেয়া প্রয়োজন।
  • অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের তাপ ও তাপমাত্র অধ্যায় থেকে তাপ সঞ্চালন কিভাবে হয়, কোন বস্তুতে কি পরিমান তাপ সঞ্চিত থাকে, তাদের প্রবাহ কিভাবে ঘটে, ইত্যাদি বিষয়গুলি পড়ে দলে আলোচনা করো। পড়া হয়ে গেলে আগের মতই শিক্ষকসহ বাকিদের সাথে আলোচনায় যোগ দাও।
  • তাপশক্তি শক্তির কেমন রূপ? এই বিষয় বুঝে নিতে অনুর গতিশক্তির সাথে তাপ শক্তির সম্পর্ক নিয়ে জেনে নাও।
  • তাপ পরিমাপের চেয়ে তাপমাত্রার পরিমাপের সাথে আমরা বেশি অভ্যস্ত। এবার তাপমাত্রার পরিমাপ কিভাবে করা হয় কি কি একক ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি বিষয়ক আলোচনা অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পড়ে নাও। পড়ার পর যথারীতি সবার সঙ্গে আলোচনা করো।
ষষ্ঠ সেশন
  • এবার নিজেদের বাড়ির নকশা করার পালা। দলে বসে আলোচনা করে নিচের সিদ্ধান্তগুলো নাও।
  • কী কী উপাদান ব্যবহার করা হবে?
  •  কী ধরনের ডিজাইন করলে তা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব ডিজাইন হবে?
  • উপকরণ বেছে নেওয়ার বিষয়ে একটা বিষয় মনে রেখো। এই ক্ষেত্রে কিন্তু বস্তুর ওপর তাপের প্রভাব যা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। তোমরা ইতোমধ্যেই জানো যে, তাপে বস্তুর প্রসারণ ঘটে। তবে এবার শুধু প্রসারণ হবে জানলেই চলবে না বরং কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের ক্ষেত্রে এই প্রসারণ কেমন হয় তা সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানতে হবে। অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে এই বিষয়গুলো পড়ে আলোচনা করো। এই অধ্যাযয়ে তোমাদের জন্য বেশ কিছু সমস্যা গাণিতিক সমস্যা আকারে দেয়া আছে। গাণিতিক দক্ষতা ব্যবহার করে এই সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করো। অন্যদের উত্তর নিয়ে মিলিয়ে দেখো এবং তোমার মতামত দাও।
সপ্তম ও অষ্টম সেশন
  • শুরুতেই তাপগতিবিদ্যা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানী জুলের পরীক্ষাটি সম্পর্কে জেনে নাও।
  • এ সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করো। সমাধান হয়ে যাওয়ার পর অন্যদের সাথে আলোচনা করো।
  • এবার তাপ গতিবিদ্যার তিনটি সূত্র অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে পড়ে আলোচনা করো।
  • এবার আমাদের বাড়ির নকশায় ফিরে যাওয়া যাক। তোমাদের নিজেদের করা পরিবেশ বান্ধব বাড়ির  নকশা ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখো এবং এর মডেল বানাতে কি ধরনের উপকরণ ব্যবহার করবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও। শেষ সেশনে এই বাড়ির মডেল তৈরি করা হবে। মনে রেখো, নকশা যেমনই হোক, তার মডেল পুরনো এবং ব্যবহৃত বিনামূল্যের উপকরণ দিয়ে তৈরি করতে হবে।
  • শেষ সেশনে মডেল বানাও। সবার মডেল বানানো হয়ে গেলে মডেলগুলো শ্রেণীকক্ষের বিভিন্ন কর্নারে প্রদর্শনের জন্য রেখে দাও। কেন তোমাদের নকশা সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছ তা অন্যদের কাছে ব্যাখ্যা করো।

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion